প্রায় সকল ধর্মেই ডুমুর কিংবা ত্বিন গাছের একটি বিশেষ গুরুত্ব আছে …
পবিত্র কুর-আনে ত্বীন নামে একটি সুরা আছে যেখানে মহান আল্লাহ ত্বীন ফলের নামে কসম খেয়েয়েছেন, আবার হযরত আদম ও মা হাওয়া আল্লাহর নিষেধ অমান্য করে গন্ধম খাওয়ার পর যখন বস্ত্রহীন হয়ে পরেছিলেন তখন এই ত্বীন ফলের পাতা দিয়েই লজ্জা নিবারন করেছিলেন, তাতে স্পস্ট করে বুঝা যায় ত্বিন গাছ জান্নাতেও আছে অর্থাৎ ত্বীন একটি জান্নাতী ফল,
বিজ্ঞানীরা কুর-আন গবেষনা করে এই ফলের যাদুকরী গুনাগুন আবিস্কার করেছেন এবং ভারত সহ পশ্চিমা বিশ্বে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের মধ্যে এর চাহিদা ব্যপক ভাবে বেড়েছে। সাথে সাথে বেড়ে চলেছে এর বানিজ্যিক উৎপাদন, অথচ এখন ও আমরা অনেকেই এই মহা বকতময় ও গুন সম্পূর্ণ ফলের ব্যপারে তেমন কিছুই জানিনা, আসুন আজ জেনে নিই পবিত্র কুর-আনে উল্লেখিত ত্বীন ফলের গুনাগুন সমপর্কে-
ডুমুর ফলে প্রচুর পরিমান vitamin A,Vitamin C,Vitamin K,B Vitamins,Potassium,Magnesium,Zinc,Copper,Manganese,Iron
বিদ্যমান, যাতে আমরা সহজেই বুঝতে পারি যে প্রতিদিন ত্বীন ফল খাওয়া কতটা জরুরী, তো আসুন আলচনা করি সেই ১০ টি কারন নিয়ে , যে কারনে আপনার প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় ত্বীন ফল তথা ডুমুর থাকা উচিতঃ
১। পুরুষত্ব ও নারীর যৌন স্বাস্থ্যঃ
প্রাচীন গ্রীকদের মতে, ডুমুর হলো একটি পবিত্র ফল এবং একটি প্রাকৃতিক আফ্রোডিসিয়াক হিসাবে বিবেচনা করা হত। এটি যৌন উর্বরতা এবং প্রেমের প্রতীক। প্রাচীন ভারতেও ডুমুর দুধের সাথে একত্রিত করে খাওয়া হত। যেহেতু এটি দস্তা, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম এবং আয়রনের মতো খনিজগুলি দিয়ে বোঝায়, উপাদান গুলি বৈজ্ঞানীক ভাবে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অবদান রাখে। তদুপরি, একটি ঘরোয়া প্রতিকার হিসাবে, অল্প বয়সী মেয়েদের প্রায়শই পিএমএস সমস্যাগুলি কাটিয়ে উঠতে ডুমুর খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। গবেষণায় আরও দেখা গেছে যেহেতু শুকনো ডুমুরগুলি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবারের একটি উচ্চ উৎস, তাই এটি নারীদের মেনোপোসাল স্তন ক্যান্সার এবং হরমোন জনিত ভারসাম্যহীনতা থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।
২। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনেঃ
ডুমুর কোন ঝোপঝারের সাধারন উদ্ভিদ নয় , গবেষনায় জানা গেছে , যে ডুমুরের পাতার রসে উপস্থিত পলিফেনন ডায়াবেটিসের সকল লক্ষনকে নিয়ন্ত্রন করে , ২০১৬ সালে ইদুরের উপর একটি গবেষনা চালিয়ে দেখা গেছে যে , ডুমুর পাতার রসে উপস্থিত ফিকুসিন ইন্সুলিনের বিকল্প একটি প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক হিসাবে কাজ করে, ২০০৩ সালে করা একটি গবেষনায় দেখা যায় যে ডুমুরের নির্যাস রক্তের ফ্যাটি এসিড ও ভিটামিনE র লেভেল কে স্বাভাবিক রেখে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে ভুমিকা পালন করে।
ডুমুরের উচ্চ পটাসিয়াম উপাদান দেহে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে, এইভাবে খাওয়ার পরে শর্করা কী পরিমাণ পরিমাণে শোষিত হয় তা পরীক্ষা করে রাখে। ডায়াবেটিস রোগীদেরজন্য সহায়ক উচ্চ পটাসিয়ামযুক্ত খাদ্য বলা হয়।গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে ডুমুরগুলিতে উপস্থিত ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে এবং টাইপ -2 ডায়াবেটিসে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
৩। ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রন, হার্ট ও কিডনি সুরক্ষায়ঃ
ডুমুরে থেকা পটাশিয়াম মানব শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে ভুমিকা রাখে পটাসিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ, যা শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় এবং এর নিয়মিত সেবন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে সহায়তা করে কারণ এটি সোডিয়ামের ক্ষতিকারক প্রভাবগুলিকে মোকাবেলা করতে পারে।
যেহেতু আমরা এমন একটি পৃথিবীতে বাস করি যেখানে আমরা ক্রমাগত প্রক্রিয়াজাত ভেজাল খাবার এর উপর নির্ভর করি, যার মধ্যে উচ্চ সোডিয়াম উপাদান থাকে তাই পটাসিয়াম সমৃদ্ধ একটি খাদ্য আমাদের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। এটি রক্ত সঞ্চালন এবং হজমজনিত অসুস্থতায়ও সহায়তা করতে পারে।
জাপানের শিগা মেডিকেল সায়েন্স ইউনিভার্সিটি কর্তৃক করা একটি সমীক্ষা অনুসারে, এটি বলেছে যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য, পটাসিয়াম সমৃদ্ধ ডায়েট গ্রহণ আপনাকে হার্ট ও কিডনি জনিত অসুস্থতা থেকে রক্ষা করতে পারে।
৪। হার্টের সুরক্ষায় ডুমুরঃ
গবেষণায় দেখা গেছে যে ডুমুর মানব দেহে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে যা চর্বিযুক্ত কণা যা রক্ত প্রবাহে সঞ্চালিত হয় এবং হৃদরোগের একটি প্রধান কারণ , তাছাড়া রক্তচাপ হ্রাস করার বৈশিষ্ট্যযুক্ত শুকনো ডুমুরের উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীর থেকে ফ্রি র্যাডিক্যালকে নির্মূল করতে সহায়তা করে, যা দীর্ঘকালীন করোনারী ধমনীতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং করোনারি হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে পারে
৫। কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করতে ডুমুরঃ
ডুমুরগুলিতে উচ্চ আঁশযুক্ত উপাদানগুলি একটি স্বাস্থ্যকর হজম ব্যবস্থা ও পরিপাকতন্ত্র বজায় রাখতে সহায়তা করে, এইভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে সহায়তা করে। নিয়মিত অন্ত্রের গতিবিধি বজায় রাখার জন্য আঁশগুলি প্রয়োজনীয় এবং নিয়মিত খাওয়ার সময় ডুমুরের মতো খাদ্য হজম কে অনেক শক্তিশালী করে তোলে।
৬। হাড়ের সুস্থতা বজায় রাখে ডুমুরঃ
শুকনো ডুমুরগুলি ক্যালসিয়ামের একটি ভাল উৎস। মানবদেহের খনিজগুলির প্রতিদিনের প্রয়োজন মেটাতে প্রতিদিন প্রায় 1000 মিলিগ্রাম ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন হয়। যেহেতু ক্যালসিয়াম শরীর দ্বারা উত্পাদিত হয় না, তাই আমরা যা খাই তা কেবল দেহের প্রয়োজনে অবদান রাখে। প্রায়শই আমরা দুধ থাকা সত্ত্বেও সেট প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে ব্যর্থ হই, যা ক্যালসিয়ামের সর্বোচ্চ উৎস।
সুতরাং আমাদের হাড়ের সুরক্ষায় ক্যালসিয়ামের অনন্য উৎস হিসাবে আমরা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ডুমুর যোগ করতে পারি আজ থেকেই।
৭। ত্বকের চিকিতসায়ঃ
ত্বকের নানা ধরনের সমস্যার সমাধান করতে পারে এই ত্বীন ফলের নিয়মিত আহার, যেমন একজিমা , ভ্যাটিলিগো , সেরিয়াসিস ইত্যাদি – আরও অনেক সমস্যায় ত্বীন ফলের ভুমিকা নিয়ে গবেষনা চলমান।
ডুমুরে অনেক গুলি ভিটামিন , মিনারেল ও এন্টি অক্সিডেন্ট থাকায়, নিয়মিত ডুমুর সেবন আপনাকে অনেক লাবন্যময় করে তুলবে, নিয়মিত খেয়ে নিজেই পরীক্ষা করে নিন , নিশ্চিত ভাবে আমি বলতে পারি, কিছুদিন পরে আয়নায় নিজের লাবন্যদীপ্ত চেহারা দেখে আমাদের উপর আপনি খুশি-ই হবেন।
৮। চুলের যত্নেঃ
বিশ্ব নামকরা সকল কোম্পানিই তাদের শ্যাম্পূতে ডুমুরের নির্যাস ব্যাবহার করে, এটি চুল কে ভেতর থেকে শক্তিশালী ও ময়শ্চারাইজ করে থাকে।
একটি গবেষনায় প্রমানিত হয়েছে যে , ডুমুরে থাকে জিংক ও কপার চুল পরা রোধে সাহায্য করে। জিংক চুল পুরুদ্ধারে সাহায্য করে থাকে।
আরেকটি পরীক্ষায় জানা গেছে মনোপোজের সময় মহিলাদের চুল পরা রোধে ডুমুরের বিশেষ ভুমিকা রয়েছে। মুলতঃ ডুমুরে থাকা zinc,copper,selenium,magnesium,calcium,B vitamins, vitamin C উপাদান গুলি চুলের পরিচর্চার ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে সহায়ক।
৯ । ওজন কমাতে কিংবা বাড়াতে ডুমুরঃ
![](https://krishok.com.bd/wp-content/uploads/2020/09/Arabian-Fig-Teen-Fruit-by-Krishok-8-800x800.jpg)
ডুমুরে প্রচুর পরিমানে ফাইবার বিদ্যমান তাই আপনার ওজন কমানোর প্রয়োজনে আজই আপনার দৈনিক খাবারের তালিকায় ডুমুর যোগ করে নিন , গবেষনায় জানা গেছে ডুমুর পরিপাকতন্ত্রকে সবল করে তোলে , উন্নত মেটাবলিজম নিশ্চিত করে।
শুধু সুন্দর পরিপাকই নয় , ডুমুরের ফাইবার আপনাকে ক্যান্সার ও টাইপ-২ ডায়াবেটিস এর ঝুকি মুক্ত রাখবে ।
আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন এ প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় জানা গেছে , ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরী কমাতে সক্ষম, তবে শুকনা ডুমুর পরিমিত খাওয়া জরুরি বলে তারা জানিয়েছেন , কারন ডুমুর বেশী পরিমানে খেলে আবার আপনার ওজন বাড়বে। সেজন্য ডুমুরকে বলা হয় “One of the best Weight management diet” , যার একই সাথে ওজন কমানো ও বাড়ানো উভয় ক্ষমতাই রয়েছে।
১০। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ
এখন পর্যন্ত ডুমুর খাওয়ার কোন বড় রকমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সন্ধান করতে পারেন নি গবেষকরা, তবে ডুমুর মোরাসি (Moraceae) পরিবারের সদস্য , এই পরিবারের অন্যন্য খাবার যেমন কাঁঠাল, ওসেজ কমলা কিংবা আপেলে যদি আপনার এলার্জি থাকে সেক্ষেত্রে ডুমুরেও আপনার এলার্জি হওয়ার সম্ভবনা আছে।
তাছাড়া ডুমুরে থাকা ভিটামিন K, পাতলা রক্তকে ঘন করে , এক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি যদি রক্ত পাতলা করার জন্য ওষুধ সেবন করেন যেমনঃ warfarin (Coumadin) সেক্ষেত্রে তাদের দৈনিক না খাওয়াটাই ভালো, তবে খেতে পারবেন না এমন নয়, পরিমিত পরিমান খেতে কোন বাধা নেই।
পরিশেষে একটি কথা, আমরা বিভিন্ন বিদেশী জার্নাল, চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের লেখা ব্লগ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সহজ ভাবে আপনার সামনে উপস্থাপন করার চেস্টা করি, যা সময়ও কস্ট সাপেক্ষ , তাই আপনার যদি এই লেখাটি একটু ও ভালো লাগে, তাহলে দয়াকরে কমেন্ট বক্সে একটি কমেন্ট করুন, প্রিয়জনদের সাথে পোস্ট টি শেয়ার করুন । এতে আমদের উতসাহ বাড়বে, ভবিষ্যতে আরো ভালো কোন হেলথ কিনবা ফুড টিপস লিখতে। ধন্যবাদ